পাপ (পাঠ ১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা পাপ | - | NCTB BOOK
23
23

যে কাজ, কথা, চিন্তা বা অবহেলার দ্বারা আমরা ঈশ্বর ও মানুষের ভালোবাসার বিরোধিতা করি অথবা ভালোবাসার সম্পর্ক থেকে দূরে চলে যাই, তা-ই পাপ। পাপ হলো বুদ্ধিশক্তি, সত্য ও শুদ্ধ বিবেকের বিরুদ্ধে অপরাধ। পাপের মধ্য দিয়ে আমরা নিজের মধ্যে অথবা অন্য কোনো সৃষ্ট বিষয়ে অতিরিক্ত আসক্ত হই। এই কারণে আমরা ঈশ্বর ও মানুষকে প্রকৃতভাবে ভালোবাসতে ব্যর্থ হই। পাপের কারণে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। পাপ মানুষের সুন্দর ও সুকোমল স্বভাবকে ধ্বংস করে। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের সংহতি বা সমন্বয়কে নষ্ট করে ফেলে। এখন আমরা বলতে পারি, পাপ হলো চিরকালীন বা শাশ্বত বিধানের বিপরীতধর্মী চিন্তা, ইচ্ছা, কথা ও কাজ। আদিপাপের মতো আমাদের অন্য সকল পাপগুলো হচ্ছে অবাধ্যতা ও ঈশ্বরের বিরোধিতা করা। পাপ হলো ঈশ্বরকে উপেক্ষা করে নিজেকে ভালোবাসা বা নিজেকে প্রাধান্য দেওয়া।

কাজ: একটু সময় নাও, নীরব হও ও চিন্তা কর, ধ্যান কর- তুমি কোন প্রকার পাপ করো।
পাপের প্রকারভেদ

পাপের প্রকার অসংখ্য। আমরা অনেকভাবে বিভিন্নরকম পাপ করে থাকি। গালাতীয়দের কাছে পত্রে সাধু পল বলেছেন: আমাদের মধ্যে একটি নিম্নতর স্বভাব অর্থাৎ দেহ বা আবেগের বশে চলার স্বভাব রয়েছে। এই নিম্নতর স্বভাবটি পবিত্র আত্মার বিরোধিতা করে। আর এই নিম্নতর স্বভাবের বশে চললেই আমরা পাপ করি। এভাবে যে পাপগুলো করে থাকি সেগুলো হলো: ব্যভিচার, অশুচিতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, পৌত্তলিকতা, তন্ত্রমন্ত্রসাধন, শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, ক্রোধ, রেষারেষি, মনোমালিন্য, দলাদলি, হিংসা, মাতলামি, বেসামাল ভোজ-উৎসব, আরও এই ধরনের সব কাজ। যারা এই ধরনের কাজ করে তাদের সম্পর্কে এই সতর্কবাণীও দেওয়া আছে যে, তারা কখনো ঐশরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।

নানা দৃষ্টিকোণ থেকে পাপের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন: পাপের প্রতি মনোভাবের দিক থেকে এক অর্থে পাপের শ্রেণিবিভাগ করা যায়, পরিবেশ-পরিস্থিতির দৃষ্টিকোণ থেকেও করা যায়। আবার ঈশ্বর, প্রতিবেশী বা নিজের বিরুদ্ধে পাপ, আত্মিক ও দৈহিক কলুষতা, আবার চিন্তা, কথা, কাজ বা অবহেলাজনিত পাপ- এসব দৃষ্টিকোণ থেকেও পাপের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। প্রথমে দেখা যাক পাপের গুরুত্বের দিকটা। পাপের গুরুত্ব অনুসারে পাপকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা: মারাত্মক পাপ ও লঘু পাপ। নিচে এই দুইরকম পাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মারাত্মক পাপ ও লঘু পাপ

মারাত্মক পাপ হলো ঈশ্বরের বিধান গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করা। এই পাপের ফলে মানুষের অন্তরের ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যায়। নিম্নতর স্বভাবের প্রতি আসক্ত হয়ে জীবনের পরম ও চরম লক্ষ্য ঈশ্বরের কাছ থেকে সে অনেক দূরে সরে যায়। ঈশ্বর, যিনি পরম সুখ, তাঁর কাছ থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জীবনের প্রাণশক্তি ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যায়। মারাত্মক পাপের ফলে মানুষ আত্মার দিক থেকে মরে যায়। যেমন: মানুষ খুন করা, ঈশ্বরনিন্দা করা ইত্যাদি।

অন্যদিকে লঘু পাপ হলো কম গুরুতর বিষয়ে নৈতিক বিধানের নির্দেশিত নীতি অমান্য করা। অর্থাৎ সামান্য বিষয়ে মানুষ যখন ঈশ্বরের অবাধ্য হয় তখন আমরা তাকে বলি লঘু পাপ। অনেক সময় মানুষ এই কাজগুলো করে পূর্ণ জ্ঞান অথবা সম্পূর্ণ সম্মতি ছাড়া। এখানে মানুষের অন্তরের ভালোবাসা সামান্য পরিমাণে ব্যাহত হতে পারে। তবে লঘু পাপের কারণে ভালোবাসা দুর্বল হয়। যেমন: মিথ্যা কথা বলা, মাত্রাতিরিক্ত হাসি-তামাশা করা, অত্যাধিক কথা বলা ইত্যাদি। এখানে মারাত্মক পাপ ও লঘু পাপের তুলনামূলক আলোচনা করা হলো:

মারাত্মক পাপ ও লঘু পাপ

মারাত্মক পাপলঘু পাপ
১। গুরুতর বিষয়ে ঈশ্বরের বিধান অমান্য করা।১। সামান্য বা ছোটো বিষয়ে ঈশ্বরের বিধান অমান্য করা।
২। ভালোবাসা নিঃশেষ হয়ে গেলে এবং ঐশ করুণা বঞ্চিত হলে মানুষ মারাত্মক পাপ করে।২। লঘু পাপে ভালোবাসা দুর্বল হয়ে যায়। তবে পবিত্রকারী কৃপা, ঈশ্বরের সাথে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা তথা শাশ্বত সুখ থেকে মানুষ পুরোপুরি বঞ্চিত হয় না।
৩। বিদ্বেষ সহকারে, সুচিন্তিতভাবে মন্দকে বেছে নেওয়া মারাত্মক পাপের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।৩। অজ্ঞতা বা পুরোপুরি না- বুঝে আজ্ঞা লঙ্ঘন করা লঘু পাপের বৈশিষ্ট্য।
৪। ব্যক্তি, স্থান বা সময়ের বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন: একজন অপরিচিত লোকের প্রতি সহিংস হবার চেয়ে নিজের জন্মদাতা পিতামাতার প্রতি সহিংস হওয়া নিশ্চয়ই অধিকতর মারাত্মক বিষয়।৪। লঘু পাপের বেলায়ও বিষয়টি প্রযোজ্য তবে কিছুটা শিথিলতা আছে।

পাপ বিষয়ে গভীরভাবে জানতে হলে কয়েকটি বিষয় আমাদের মনে রাখা আবশ্যক। বিষয়গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১। ঈশ্বরের ক্ষমা, পরিত্রাণ ও ঐশ কৃপায় সর্বদা বিশ্বাস করা। কারণ তিনি অসীমরূপে ক্ষমাশীল। তিনি সবসময় অপেক্ষা করেন কখন আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসব। পাপ থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর তাঁর একমাত্র পুত্র যীশুকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
২। কখনো নিরাশ না-হওয়া। ঈশ্বরের ওপর সবসময় আস্থা ও আশা রাখা।
৩। পাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
৪। পাপের পথ পরিহার করার ইচ্ছা থাকা।
৫। সঠিক বিবেক গড়ে তোলা ও বিবেকের নির্দেশমতো পথ চলা।
৬। নিজের স্বাধীন ইচ্ছার সঠিক ব্যবহার করা।
৭। ঈশ্বর পাপকে ঘৃণা করেন তবে পাপীকে নয়- একথা সবসময় মনে রাখা।

কাজ: পাঁচটি মারাত্মক পাপ ও পাঁচটি লঘু পাপের নাম লেখ।
Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;